জাকির সিকদারঃ পৌরসভা নির্বাচন সর্বোপরি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পথে। ৬ষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ২০১৬ইং তারিখ শেষ হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সরকারে যারাই থাক উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রক্রিয়াধীন প্রকল্প সমূহ অব্যাহত থাকবে এটাই নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা ভাবা খুবই মুশকিল। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে লক্ষনীয় বিষয় যে, এক সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ পরবর্তী সরকার বাতিল করে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করে। আর এর মধ্য দিয়েই জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয় ও হিংসা হানাহানির রাজনীতি চিন্তা চেতনার উন্নয়ন ঘটে, যার প্রভাব পড়ে পুরো জাতির উপর। আসলে এসব কথা বলার অর্থ হলো মায়ের কাছে মামা বাড়ির গল্প করার মত। কারণ এগুলো এদেশের প্রায় সকল জনগনেরই জানা বিষয়। মূল কথা হলো আওয়ামীলীগ সরকারের আড়াই বৎসর পার হতে চলেছে। দেশের রাজনৈতিক মহলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবী রয়েছে। এ সরকারের অধিনে বেশ কয়টি সংসদ উপ নির্বাচন, ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, আর এই নির্বাচন গুলির মাধ্যমে আওয়ামীলীগ জাতীয় পর্যায়ে থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত ক্ষমতার প্রায় ১৬ আনাই পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নিজেদের স্ব-অবস্থায় ধরে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও মৌসুমী জ্বরের রোগীদের মত, খাওয়ায় অরুচি, হাড়ের জোড়ায় জোড়ায় ও মাংস পেশীতে ব্যাথায় শয্যাশায়ী, যেন আর উঠতে পারছেনা। এ জ্বর সারাতে যে জাতীয় এন্টিবায়োটিক দরকার তাও বর্তমানে নেই তাদের হাতের কাছে, তারপরও আবার মাঝে মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা বা আসলাম চৌধুরী নামক বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে এক ধরনের খারাপ আবহাওয়া বইছে। এ আবহাওয়া পরিবর্তন না হলে এই জ্বর ও সেরে উঠার সম্ভাবনা কম। হতে পারে এসবই আওয়ামীলীগের সু-চতুর রাজনৈতিক কূটকৌশল, আর নিয়মওতো তাই। একটা রাজনৈতিক শক্তি তার নিকটবর্তী রাজনৈতিক শক্তিকে দাবিয়ে রাখবে রাজনৈতিকভাবে। এক্ষেত্রেও আওয়ামীলীগের সফলতা কম নয়। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলগতভাবে আওয়ামীলীগকে প্রথম ধরলে বিএনপি দ্বিতীয় আর জাতীয় পার্টি ৩য় অবস্থানে থাকে। এই তিনটি দলই পর্যায়ক্রমে দেশের ক্ষমতাও অধিষ্ঠিত রয়েছে। আওয়ামীলীগ খুব সু-কৌশলে মহাজোটের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে নিজেদের মাঝে একিভূত করে বিএনপির ২০ দলীয় জোটকে ধরাশায়ী করতে সক্ষম হয়েছে। এর বাহিরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দলই রয়েছে, যাদের সিরিয়াল ৪-৯ নম্বরে। তাদের হিসেবে ধরা যায় না বা তারা কোন না কোনো জোটেই অবস্থান করছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০। গণিতের আরও একটি সংখ্যা বাকী থাকে তা হলো ০ (শূণ্য) সেখানে অবস্থান করছে বাংলাদেশের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির স্লোগানে এনপিপি’র নেতৃত্বে এনডিএফ নামক তৃতীয় জোটটি। এই জোটের ০ (শূণ্য) থেকে নিচে নামার কোন সম্ভাবনা নাই। কিন্তু ডানদিকে অথবা বামদিকে কোন না কোন সংখ্যা যুক্ত হয়ে গুনগত পরিবর্তন আসতে পারে, পৌছে যেতে পারে দশকে, শতকে, সহ¯্র,ে লক্ষ- কোটিতে। এমনকি জনগনের মধ্যে কাঙ্খিত তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উদয় হতে পারে। এমনকি ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ হিসাব নিকাশ এখন করে লাভ নেই, সময় ই বলে দিবে প্রকৃত হিসাব। যা বলতে চেয়েছিলাম তা হল আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সাংগঠনিক, ক্ষমতা শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে এ বিশাল সফলতায় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের খুন- লাঞ্চিত- অপমানের ঘটনা, স্ব-দলের কর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমতার মরন লড়াই, শিশু খুন, অস্ত্র লুট তদন্তে গাফিলতি, কৃষকের উপর ঋণের মামলা, এমপি-মন্ত্রী ও তাদের পুত্রদের খুন খারাপি, বিচারে বিলম্ব, বিচারহীনতা এমনকি সকল ক্ষেত্রেই বিএনপি, জামায়াত কর্মীদের দোষারোপ, আইএসআই, জঙ্গী আখ্যায়িত করে ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত এই যেন জাতীয় রাজনীতিতে ঘূর্নিঝড়েরই পূর্বাভাস। আর এই বিষয়গুলি সুনিপুন ভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে উৎ পেতে থাকা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সূচের মত ভিতরে প্রবেশ করে লন্ড ভন্ড করে দিতে পারে সকল সফলতার ফসল। ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়তে হতে পারে আওয়ামীলীগকে। তাই সকল সচেতন জনগনকেও সতর্ক থাকতে হবে। যে কোন অবস্থাতে যেন জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ না হয়। রাজনৈতিক হানাহানি, হিংসা-প্রতি হিংসা থেকে জাতীয় রাজনীতিকে বের করে আনা যায়। সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়া যায়। দেশ এগোবেই ইনশাআল্লাহ।
৫জানুয়ারী ২০১৪ইং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা অব্যাহত রাখার ঘোষনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। আর এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২য় বারের মত নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর ৩০ মাস অর্থাৎ আড়াই বছর শেষ হওয়ার পথে। জননেত্রী শেখ হাসিনার এই সরকারের আড়াই বছরের সফলতা অনেক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পদ্মা সেতু নির্মাণ, সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময় অন্যতম। এছাড়াও অর্থ, বাণিজ্য, আইটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সড়ক-রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সহ অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। মূলত যেকোন দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এক বা দুই মেয়াদেই একটা সরকার সবকিছুর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ফেলবে এ আশা করাটা মোটেই ঠিক না।